অতিরিক্ত ভালোবাসা

















।। তাজিরুন ফেরদৌস ।। 

তুর্য শেষ বর্ষের ছাত্র।আজ তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীন বরণ।সকাল থেকেই তুর্য ব্যস্ত শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির জন্য।তুর্যদের ব্যাচ সিনিয়র হওয়ায় সব দায়িত্ব তাদের।সবকিছু ওরা সুন্দর ভাবে গোছালো।অনুষ্ঠান শুরু হলো।তনুজা আজ নীল শাড়ি পরে এসেছে।আজ তার নবীন বরণ তাই আজ সে হালকা সেজে এসেছে।এতেই তাকে দারুণ লাগছে।সাংস্কৃতিক আয়োজন শুরু হলো।এবার তুর্য গান গাবে।সবাই হাত তালি দিয়ে উঠলো।তুর্য তার গানের গলার জন্য সবার খুব পছন্দের।তুর্য স্টেজে উঠে গান শুরু করলো।তুর্য "আমার হিয়ার মাঝে" গাইলো।তুর্যর গান শুনে তনুজার তুর্যকে ভালো লেগে গেলো।এতদিন সে শুধু তুর্যর কথা সবার কাছে শুনেই এসেছে কিন্তু আজ প্রথম তুর্যর গান নিজ কানে শুনে সে বুঝতে পারলো।এখন নতুন শিক্ষার্থীদের ফুল দেয়ার পালা।তুর্য সকলকে ফুল দিবে।একজন একজন করে নতুন শিক্ষার্থীরা স্টেজে উঠে তুর্যর হাত থেকে ফুল নিচ্ছে এবং তার গানের প্রশংসা করছে।এবার তনুজা স্টেজে উঠলো ফুল নেয়ার জন্য।তুর্য প্রথমবার তনুজাকে দেখলো।তনুজাকে দেখে সে একদম বিস্মিত হয়ে যায়।প্রথম দেখাতেই তনুজার প্রেমে পড়ে যায়।লাভ এট ফার্স্ট সাইট।সে তনুজার দিকে হা করে তাকিয়েই আছে।তনুজা কিছুটা লজ্জা পেলো।সে তুর্য কে কিছু বলতে চেয়েও তুর্যর এই অবস্থা দেখে কিছু না বলেই চলে গেলো।তুর্য কিছুটা অবাক হলো।যেখানে সবাই তার প্রশংসা করলো সেখানে তনুজা কিছুই বললো না।ভালোভাবে অনুষ্ঠান শেষ করে সবাই বাসায় ফিরলো।

তুর্যর শুধু তনুজার কথাই ভাবছে।তনুজা তুর্যর অবস্থা মনে করে একা একাই হাসছে।হাসতে হাসতে সে ঘুমিয়ে পড়লো পরেরদিন ক্লাস আছে তাই।তুর্য কোনোভাবেই ঘুমাতে পারছেনা।তার মাথায় শুধু তনুজা।সে তনুজার নাম ছাড়া কিছুই জানেনা।তাই পরের দিন সে সকাল সকাল ক্যাম্পাসে গেলো।গিয়ে সে তনুজার সব খবর জেনে নিলো।তনুজা ফার্মেসি ডিপার্টমেন্টের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। তুর্য হলো ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শেষ বর্ষের ছাত্র।তুর্য ক্লাসের ফাঁকে শুধু তনুজার ক্লাসে উঁকি দেয়।সে সারাক্ষন তনুজাকে ফলো করে।অনেকদিন ফলো করার পর একদিন তুর্য সাহস করে তনুজাকে ডাক দিল।

-এই যে তনুজা
-জি ভাইয়া বলুন
-আমাকে ভাইয়া বলার প্রয়োজন নেই আমাকে নাম ধরেই ডাকতে পারো।
-আসলে আপনি আমার সিনিয়র তো তাই ভাইয়া ডাকলাম।আচ্ছা আপনাকে নাম ধরেই ডাকবো।তো আমাকে ডেকেছেন কেনো।
-এমনেই ডাকলাম।আসলে হচ্ছে কি তোমার ফোন নাম্বার টা দেয়া যাবে।
-জি নাম্বার দেয়া যাবে কিন্তু কেন?
-আসলে যেকোনো দরকারে লাগতে পারে তাই।
-আচ্ছা আপনার ফোন টা দিন আমি নাম্বার সেভ করে দিচ্ছি।
তুর্য তনুজার নাম্বার পেয়ে মহাখুশি।কিন্তু সে কোনো ফোন বা এসএমএস দেয় নি।ক্যাম্পাসে প্রায়ই তাদের দেখা হতো এবং হালকা কথাও হতো।এভাবে তারা পরিচিত হয়।তুর্য তনুজা কে যতই দেখছে ততই ভালোবেসে ফেলছে।তুর্য ১৪ই ফেব্রুয়ারির অপেক্ষায় থাকে তার ভালোবাসার কথা তনুজা কে বলার জন্য।১৩ই ফেব্রুয়ারি রাত ১১:৫০ এ তুর্য তনুজাকে প্রথম ফোন দেয়।

- হ্যালো তনুজা
-জি আমি তনুজা।আপনি কে?
-আমি তুর্য।
-ওহ আপনি!এতরাতে ফোন দিলেন যে?কোনো দরকার?
-তুমি একটু তোমার বাসার নীচে আসতে পারবে।
-এতরাতে নীচে আসবো কেনো?আর আপনি আমার বাসার নীচে কি করছেন?বাসা চিনলেন কিভাবে?
-নীচে আসলেই সব প্রশ্নের উত্তর পাবে
-আচ্ছা আপনি দাঁড়ান আমি আসছি।

তনুজা নীচে নামলে তুর্য তনুজার চোখ ধরে ওকে ওদের বাড়ির পিছনের বাগানে নিয়ে যায়।তনুজা চোখ খুলে দেখে সামনে ভালোবাসি তোমাকে লিখা মোমবাতি দিয়ে গাছে ওর ছবি টাঙানো,হার্ট শেপ বেলুন আর ফুল দিয়ে পুরো বাগান সাজানো।তনুজার মাথার উপর ফুল পরতে থাকে।তনুজার কাছে সব স্বপ্নের মতো লাগছিলো।তুর্য পিছন থেকে তনুজাকে বলে হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন্স ডে।তুর্য হাটু গেড়ে বসে বলা শুরু করলো।

-তোমাকে নবীন বরণ এর দিন যখন প্রথম দেখি তখন থেকেই তোমাকে ভালোবাসি।আস্তে আস্তে ভালোবাসা টা শুধুই বেড়েছে।আমি আর নিজেকে কোনোভাবেই আটকাতে পারলামনা।আমি তোমাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি।তুমি হয়তো জীবনে আমার চেয়েও ভালো কাউকে পাবে কিন্তু আমার মতো তোমাকে কেউ ভালোবাসতে পারবেনা।আমি তোমার জন্য সব করতে রাজি।তুমি কি তনুজা থেকে আমার তনু হবে?
-আমারো আপনাকে প্রথম দিন থেকেই ভালো লাগে।আমি জানি যে আপনি রোজ আমাকে ফলো করতেন।আমিও এই মুহুর্তের অপেক্ষায় ছিলাম।কিন্তু এভাবে সব হবে আমি স্বপ্নেও ভাবিনি।আমিও আপনাকে ভালোবাসি।আমি আপনার তনু হতে রাজি।

-ভালোই যখন বাসো তখন আপনি কেনো?
-আচ্ছা আমি তোমাকে ভালোবাসি।আমি শুধুই তোমার।
-আমিও তোমাকে ভালোবাসি।সারাজীবন বাসবো।তুমি শুধুই আমার।
এভাবেই দুজনের সম্পর্কের শুরু হয়।পরেরদিন পুরো ক্যাম্পাস ওদের ভালোবাসার কথা জানে।সবাই খুব খুশি হয়।তাদের ভালোবাসাময় দিনগুলো খুব ভালো কাটে।দুজনের কেয়ারিং ছিলো অনেক।একে অপরকে আগলে রাখে সবসময়।তুর্য রোজ সকালে তনুজা কে বাসা থেকে নিয়ে আসে এবং দিয়ে আসে।তুর্য সবসময় শুধু তনুজার কেয়ার করে।তুর্য তনুজাকে আরও বেশি ভালোবাসে।ক্লাস শেষে দুজন রোজ নদীর পারে যায়।তনুজা তার বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে চায় সে সবাইকে নিয়ে ঘুরতে চায়।কিন্তু তুর্য চায় শুধু তারা দুজন থাকবে।তুর্য তাই রোজ নদীর পাড়ে যেত কারন সেখানে আর কেউ থাকতোনা শুধু তারা দুজন।এভাবে তাদের সম্পর্ক ভালোই যাচ্ছিলো।

আজও ওরা নদীর পাড়ে আসে।তনুজা বলা শুরু করলো
-আচ্ছা তুমি রোজ এই এক জায়গাতেই কেনো আসো?আর সাথে কাউকে আনতে চাওনা কেনো।আমার বন্ধুদেরও না আর তোমার বন্ধুদেরও না।
-এই জায়গাটা সবচেয়ে নীরব তাই।এখানে শুধু তুমি আর আমি।আমি শুধু তোমার সাথে সময় কাটাতে চাই তাই কাউকে আনিনা।এখানে তুমি আমার কাঁধে মাথা রেখে গান শুনতে পারো,আমি তোমার কোলে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে শুতে পারি।অন্য জায়গায় তো অনেক মানুষ থাকে।আর তোমার আর আমার বন্ধুদের সাথে তো ক্লাসে থাকিই।বাকি সময়টা নাহয় শুধুই আমাদের একান্ত।আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।তুমি শুধুই আমার।
-পাগল একটা।এত্ত ভালোবাসা ঠিক না।পরে হিতে বিপরীত হবে।অতিরিক্ত কোনো কিছুই ঠিক না।
-তোমাকে যতই ভালোবাসি ততই কম মনে হয়।তাই অতিরিক্তর কিছু নেই।আর বেশি ভালোবাসা কি দোষের?
-না দোষের না।তুমি আসলেই একটা পাগল।আচ্ছা এখন এসব বাদ দাও।গান শুরু করো।
তুর্য গান শুরু করলো।তনুজা গান শুনছে।এভাবে ভালোই দিন কাটছে।এর মাঝে তুর্য পাস করে বের হয় আর তনুজা দ্বিতীয় বর্ষে যায়।তুর্য পাস করার সাথে সাথেই তার চাকরী হয়ে যায়।সে গিয়ে তনুজাকে এই খবর দেয়
-তনু আমার চাকরী হয়ে গেছে।আমরা আমাদের স্বপ্ন পূরণে আরও একধাপ আগালাম।এখন শুধু তোমার পাস করার অপেক্ষা।

-হুম খুব ভালো খবর।এখন তো তুমি রোজ আমাকে আর আনা-নেয়া করবেনা তাইনা।আর না করাটাই ভালো।তোমার অফিস আছে আর তোমার এসব নিয়ে আমাকে সবাই খেপায়।
-আনা-নেয়া করবো না কেন?তুমি আমার তো তোমার দায়িত্ব টাও আমার।অফিস এর জন্য আমি তোমাকে অবহেলা করবো কেনো?আর তোমাকে খেপানোর কি আছে?আমি এমন কি করি যে খেপাবে?
-এই যে তুমি আনা-নেয়া করো,আমার বন্ধুদের সাথে তুমি থাকতে দেওনা,কোথাও যেতে হলে বা কিছু করতে হলে তোমার অনুমতি নেয়া লাগে,তুমিও কিছু করার আগে বারবার জিজ্ঞাস করো।ভালো তো সবাই বাসে কিন্তু এরকম কেউ করে নাকি।এগুলো একটু বেশি বেশি না।তোমাকে আগেও বলেছিলাম অতিরিক্ত কোনো কিছুই ঠিক না।
-আমি এমনই ।আমার ভালোবাসা এমনই।আমি সবার মতো না।আমি আমার ভালোবাসার ভাগ দিতে রাজি না।তুমি সব কিছু দেখলে কিন্তু এটা বুঝলে না যে আমি তোমাকে বেশি ভালবাসি তাই এমন করি।
-এখন ঝগড়া করতে চাচ্ছিনা।আমিও তো তোমাকে ভালোবাসি।তোমার যা খুশি করো।তুমি খুশি থাকলেই হবে।এখন চলো বাসায় যাই।

তুর্য চাকরীতে জয়েন করে।এরপরেও সে রোজ তনুজাকে আনা-নেয়া করে।তুর্য তনুজাকে দিন দিন আরও ভালোবাসতে থাকে।কিন্তু এখন তার ভালোবাসাটা এতো বেড়ে গেছে যে এখন সেটা ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে।তুর্য তার তনুর সাথে কাউকে দেখতে পারেনা সে শুধু নিজের করে তার তনু কে পেতে চায় আর বিশেষত কোনো ছেলেকেই সে তার তনুর সাথে সহ্য করতে পারেনা।

আজ তনুজার পরীক্ষা।তুর্য তনুজাকে নিয়ে যেতে দেরি করছে।তুর্য এখনো আসেনি।তনুজার বাসার পাশেই তার বন্ধু আরিয়ান থাকে।তুর্যর আসতে দেরি হওয়ায় সে আরিয়ান এর সাথেই চলে যায় ভার্সিটি।তনুজা আরিয়ানের সাথে রিকশায় উঠলে তুর্য এসে পৌঁছায়।তুর্য তনুজাকে ডাক দেয় কিন্তু তনুজা শোনেনি কারণ তখন সে আরিয়ান এর সাথে মজা করছিলো রিক্সায়।তুর্য অফিস চলে যায়।পরীক্ষা তারাতারি শেষ হওয়ায় তনুজা আরিয়ানের সাথেই বাড়ি ফিরে যায়।তুর্যকে তনুজা টেক্সট দিয়ে রাখে।অফিস শেষে বাড়ি ফিরে তুর্য তনুজাকে ফোন দেয় কিন্তু ফোন বিজি পায়।তিনবার ফোন দেয়ার পর তনুজা ফোন ধরে।
-হ্যালো বলো
-ফোন বিজি ছিলো কেন?
-ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছিলাম।
-কোন ফ্রেন্ড?আজকে যার সাথে গেলে সে নাকি?নতুন বয়ফ্রেন্ড হলো নাকি তোমার!একসাথে যাওয়া আসা আবার ফোনেও কথা বলো।
-কি বলছো এসব।আরিয়ান জাস্ট আমার ফ্রেন্ড তার বেশি কিছুনা।আমার যেতে দেরি হচ্ছিলো তাই আমি ওর সাথে গিয়েছি।তুমি বেপারটা এভাবে দেখছো কেন?
-গিয়েছো ভালো কথা কিন্তু এতো হাসাহাসি কেন করছিলে?আর বাসায় ফেরারও কি খুব তারা ছিলো যে ঐ ছেলেটার সাথেই বাড়ি ফিরতে হলো।আমার সাথে দেখা করার কি প্রয়োজন ছিলোনা আজকে নাকি তাকে পেয়ে আমাকে ভুলে গেছো? এত্ত প্রেম!
-তুমি এসব কি বলছো আজেবাজে?ও এর আমি শুধুই বন্ধু।আমি তো তোমাকে ভালোবাসি।তোমাকে ভালোবাসি বলে কি আমি আমার বন্ধুদের সাথেও মিশতে পারবোনা?আর বন্ধুদের সাথে কি হাসাহাসিও করা যাবেনা?এটা কেমন কথা!
-নাহ তুমি পারবেনা।তুমি শুধু আমার।তোমার সবকিছু শুধু আমার।তোমার দিকে অন্য কোনো ছেলে তাকাতেও পারবেনা আর মেশা তো দূরের কথা।তোমার জীবনে একমাত্র পুরুষ আমি আর কেউনা।
-এটা কি বেশি বেশি হচ্ছেনা তুর্য?
-বেশি হলে বেশি।এটাই লাস্ট ওয়ার্নিং আর যেনো কখনো না দেখি ঐ ছেলেটার সাথে বা অন্য কারো সাথে।তুমি শুধু আমার।
-তুমি বেশি বেশি করছো কিন্তু তুর্য।
-আমার যা বলার বললাম।এখন রাখি বাই।

তুর্য ফোন রেখে দিল।তনুজা কাঁদছে।সে কিছুই বুঝছেনা।তার খুব রাগ হচ্ছে।পরেরদিন তনুজা সকালে তুর্যর জন্য না দাঁড়িয়ে জেদের কারণে আরিয়ানের সাথেই ভার্সিটি যায়।এটি দেখে তুর্য আরো রেগে যায়।তুর্য গিয়ে তনুজার ভার্সিটিতে দাঁড়িয়ে থাকে।তনুজা বের হলে তুর্য দৌড়ে তনুজার কাছে যায়।গিয়ে সরি বলে।তনুজা তুর্যকে মাফ করে দেয়।দুজনে একসাথে অনেকখন ঘুরে বেড়ায় তারপর একসাথে বাড়ি ফিরে।দুজনেই এখন খুশি।পরেরদিন তুর্য তনুজাকে নিয়ে ভার্সিটি যায়।তনুজা ভার্সিটির ভিতরে গেলে তুর্য অফিস যাবার জন্য গাড়ি খুঁজতে থাকে।পাঁচ মিনিট পরেই তনুজা দৌড়ে আসে।সে অঝোরে কাঁদছে।তুর্য তাকে জড়িয়ে ধরে বলে
-কি হয়েছে তোমার!কাঁদছো কেন?
- আআআআ....
-কি হয়েছে বলো তো আমাকে
-আরিয়ান কাল রাতে মারা গেছে!
-কি বলছো এসব?কিভাবে হলো!
-কিভাবে হলো জানিনা।মাত্রই শুনলাম যে ও মারা গেলো।আমরা একদিন আগেই ওকে নিয়ে কতো ঝগড়া করলাম আর আজ ও নেই।

-তুমি কেঁদোনা।তুমি বাসায় চলো।আজকে ক্লাস করতে হবেনা আর আমি আরিয়ানের জানাজায় যাই।
তুর্য তনুজাকে বাড়িতে দিয়ে আসে।তনুজা কেঁদেই যাচ্ছে।তুর্য আরিয়ানকে কবর দিয়ে এসে বাড়িতে ফিরে তনুজাকে জানায়।তাদের দুজনেরই মন খারাপ।কিছুদিন পর আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়।কিন্তু তুর্যর বাড়াবাড়িটা বাড়তেই থাকে।তনুজার সব কাজ তুর্যকে জানিয়ে করতে হয়।আর সে কোনো ছেলে টিচারের সাথে কথা বললেও তুর্য রেগে যায়।আর তা নিয়ে ঝগড়া হয়।তারপর আবার তুর্যই সরি বলে সব ঠিক করে।

ওরা দুজন যাকে নিয়েই ঝগড়া করে ঝগড়ার কয়েকদিন পরই সেই মানুষটা মারা যায়।এরজন্য তনুজা মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ছে।তুর্যকে কোনো কিছু জানাতে ভুলে গেলেই তুর্য রাগারাগি করে।দিন দিন মাত্রা টা বেড়েই যাচ্ছে।তার সাথে কি হচ্ছে সে বুঝতে পারছেনা।এরমধ্যে তনুজার ভার্সিটির ফ্রেন্ড আবির তনুজাকে প্রপোজ করে এবং সে তনুজাকে কথা দেয় যে সে তনুজা কে যতটা স্পেস তনুজা চায় তাই দিবে।সে শুধু তনুজার ভালোবাসা চায়।তনুজা তার কাছে সময় চায়।তনুজা তুর্য কে কিছুই জানায়নি কারন তুর্য রাগবে।কিন্তু তুর্য কিভাবে যেন জেনে যায়।তুর্য তনুজাকে দেখা করতে বলে।তারা দেখা করে।তুর্য কথা শুরু করে।
-তোমাকে আমি কিছু নিষেধ করেছিলাম
-হুম।আমিতো তোমাকে না জানিয়ে কিছুই করিনি।

-আবির কে?
-ও আমার ক্লাসমেট।
-শুধুই ক্লাসমেট?ও তোমাকে প্রপোজ করেনি?
-হুম করেছো তো কি হয়েছে।তুমি কিছু দিন পরপর নতুন নতুন ইস্যু নিয়ে এমন করো কেন।ওর আমাকে ভালো লেগেছে ও প্রপোজ করেছে কিন্তু আমিতো এক্সেপ্ট করিনি।আমিতো তোমাকেই ভালোবাসি।
-আমাকে জানানো প্রয়োজন ছিলোনা একবার।
-তোমাকে জানালে তুমি এমন রাগ করতে তাই বলিনি।আর আমার কি নিজস্বতা বলতে কিছু নেই।সবকিছু কেন তোমাকে জানাতে হবে।আমি তো তোমাকে এতো জেরা করিনা।তুমি কোনো এমন করো আমি আর নিতে পারছিনা।আমার সহ্য সীমা ক্রস করে গেছো তুমি।আমি তোমার সাথে আর থাকতে পারছিনা।
-আমি তোমাকে ভালোবাসি বলেই তো এমন করি।আমিতো আমার সব তোমাকে জানাই।আমার তো সমস্যা হয়না।তোমার তাহলে হয় কেনো?আই লাভ ইউ।
-আমি কি তোমাকে ভালোবাসি না?তাও তুমি এমন করো।একটু ভুল হলেই তুমি ইস্যু টাকে অনেক বড় করো।কিসের জন্য?আমি আর পারবোনা।আই এম সরি।আমি তোমার সাথে সম্পর্ক রাখতে পারবোনা।আমি আবির কেই এক্সেপ্ট করে নিবো।আর যাই হোক ও তোমার মতো এতো সন্দেহ করেনা।ও আমাকে বোঝে এবং ও আমাকে তোমার থেকে বেশি ভালোবাসে।বি হ্যাপি।বাই।

তনুজা উঠে চলে গেলো।তুর্যর পৃথিবী একদম অন্ধকার হয়ে গেলো।তুর্য বুঝতে পারছেনা কিছু।তার সবকিছু থমকে গেলো।তুর্য তনুজাকে অনেক ডাকলো কিন্তু তনুজা চলে গেলো।তনুজা সাথে সাথে আবিরকে ফোনে জানালো যে সেও আবিরকে চায়।আবির খুশি মনে ফোন রাখলো।তুর্য তনুজাকে ফোন দিয়েই যাচ্ছে কিন্তু তনুজা ধরছেনা।তুর্য অনেক গুলো টেক্সট পাঠালো কিন্তু কোনো উত্তর নেই।তনুজা অনেক কাঁদলো কিন্তু সে নিজেকে ঠিক করে নিলো।আবির তার মন ভালো করে দিলো।তুর্য বারবার ফোন বেস্ত পাওয়া সত্ত্বেও ফোন দিয়ে যাচ্ছে।তুর্য তনুজার বাসার সামনে এসে।তনুজাকে একটিবারের জন্য নীচে নামার জন্য অনেক টেক্সট দেয় কিন্তু তনুজা আসেনা।তুর্য সারারাত তনুজার বাসার সামনেই থাকে।সকালে তনুজা ভার্সিটি যাবার জন্য বের হলে তুর্য তাকে ডাক দেয় কিন্তু তনুজা তুর্যর ডাক না শোনে আবিরের সাথে ভার্সিটি যায়।তুর্য ভার্সিটির সামনেও গিয়ে দাঁড়ায় কিন্তু তনুজা বারবারই তুর্যকে উপেক্ষা করে।তনুজা আবিরকে নিয়েই ব্যস্ত।সে আবির কে নিয়ে সব দুঃখ ভুলে অনেক সুখে আছে।তুর্য অনেকদিন তনুজার সাথে একটু কথা বলার জন্য তনুজার পিছনে অনেক ঘুরেছে কিন্তু তনুজা কোনো পাত্তাই দেয়নি।আবির কে নিয়েই এখন তনুজার সব।

এক সপ্তাহ হলো তুর্যর কোনো দেখা নেই।তনুজা ভাবলো হয়ত তুর্য বুঝতে পেরেছে তাই এখন আর তার পিছনে ঘুরেনা।পরেরদিন তনুজা ঘুম থেকে উঠে আবির কে ফোন দেয় কিন্তু আবির ফোন ধরেনা।তনুজা তাই একাই ভার্সিটি চলে যায়।ভার্সিটি গিয়ে তনুজা জানতে পারে আবির নিখোজ।গতকাল রাত থেকে আবির কে পাওয়া যাচ্ছেনা।তনুজা উদ্বিগ্ন হয়ে পরে।ক্লাস শেষ করে ভার্সিটি থেকে বের হয়েই তনুজা আবিরকে ফোন করে কিন্তু আবির ফোন ধরছেই না।তনুজা আবির কে ফোন করেই যাচ্ছে।কে যেন পিছন থেকে এসে তনুজার মুখে একটা রুমাল চেপে ধরে।তনুজা সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে যায়।

জ্ঞান ফিরলে তনুজা চোখ খুলে দেখে সে একটি রূমে।তার হাত-পা বাঁধা।রুমের হালকা আলো।হালকা আলোতে দেখা যাচ্ছে কেউ একজন সামনে চেয়ারে বসা।রুমের দেয়াল গুলোতে অনেকগুলো তারিখ লেখা রক্ত দিয়ে।রুমটা তনুজার খুব চেনা চেনা লাগছে।তনুজার সামনে একটা লোক কে হাত-পা বাধা অবস্থায় এনে ফেলা হয়েছে।তনুজা লোকটার দিকে তাকিয়ে দেখলো এটা আবির।তনুজা আবির বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো।আবির তনুজার দিকে তাকালো।আবির কিছু বলতে পারছেনা কারন তার মুখ বাধা।তনুজার রুমটার কথা মনে পড়লো।এই রুমে সে তুর্যর সাথে তাদের সম্পর্কের শুরুর দিকে কয়েকদিন এসেছিলো।চেয়ারের লোকটা অনেক শব্দ করে হাসছে।হাসি টাও তনুজার অনেক পরিচিত লাগছে।চেয়ারের লোকটা ঘুরলো।তনুজা লোকটাকে দেখে অবাক।চেয়ারে তুর্য বসা।

সে হাসতে হাসতে তনুজার সাথে কথা শুরু করলো।
-কেমন আছো তনু?
-এসবের মানে কি তুর্য?
-কিসের মানে?
-তুমি আমাকে আর আবিরকে এখানে তুলে এনেছো কেন?
-খুব কষ্ট হচ্ছে বুঝি!
-এসব কি ধরনের আচরণ তুর্য !
-তুমি যখন আমাকে ছেড়ে গেলে এর থেকেও অনেক বেশি কষ্ট আমি পেয়েছিলাম।কতদিন তোমার পিছনে ঘুরলাম একটু কথা বলার জন্য কিন্তু এই ছেলেটার জন্য তুমি আমাকে চিনলেই না।এই ছেলেটার জন্যই সব সমস্যা তো! ওকে এবার শেষ করে দিবো।নিজের ভালোবাসার মানুষকে দূরে যেতে দেখলে কেমন লাগে এবার তুমি বুঝো।
-তুর্য তুমি পাগলামি করছো কেন?আমার জন্য তুমি আবিরকে খুন করবে কেন?তুর্য শান্ত হও প্লিজ।
-তোমার সাথে যে ছেলেই মিশতে যাবে তাকেই আমি শেষ করে দিবো।তোমার জীবনের একমাত্র পুরুষ আমি হবো আর কেউ না।দেয়ালের তারিখ গুলো দেখেও কি তুমি বুঝতে পারছনা?তোমার সাথে আমি যাকে নিয়েই ঝগড়া করতাম অর্থাৎ যে ছেলেই তোমার সাথে মিশতো আমাদের ঝগড়া ঠিক হবার পর সেই মারা যেতো।আমি নিজ হাতে তাদের এই রুমে খুন করতাম।খুন শেষে তাদের রক্ত দিয়ে তারিখ টা লিখে রাখতাম।আমি তোমার পাশে কোনো ছেলেকেই সহ্য করতে পারিনা।তাই সবাইকে একবারেই শেষ করে দিয়েছি যাতে কেউ ঝামেলা করতে পারেনা।কিন্তু এই আবির না কি যেন এটাকে রাখা টাই ভুল হয়েছিলো।এটাকেও শেষ করে দিবো।

-তুমি একটা মানসিক রোগী।তুমি প্লিজ শান্ত হও।আমার জন্য তুমি এতগুলো মানুষকে শেষ করেছো শুনেই আমার কেমন লাগছে আর তোমার খুন করেও কোনো খারাপ লাগা নেই?অনেক তো খুন করেছো প্লিজ আর না।আমি জানলে কখনই তোমার সাথে সম্পর্ক করতাম না।তুমিতো আমাকে ভালোবাসো প্লিজ আবিরকে খুন করোনা।
-আমিও তোমাকে অনেক ডেকেছিলাম কিন্তু তুমি শোনোনি।আমি তোমাকে ভালোবাসি।তোমার কথা আমি শুনবো তুমি আমারটা না শুনলেও।আমি ওকে খুন করবোনা।
তুর্য ডাক দিলে কয়েকটা ছেলে এসে আবির কে নিয়ে যায়।তনুজা একটা স্বস্তির হাসি দিয়ে তুর্য কে থেঙ্কস দেয়।
-থেঙ্কস আমার কথা রাখার জন্য।
-ওয়েলকাম।আবিরকে অনেক ভালোবাসো তাই না?আমাকে তো এতটা ভালোবাসনি।আমার জন্য তোমার এমন অবস্থা কখনো দেখেনি।

-আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসতাম।কিন্তু তোমার এই আচরণ এর জন্য আমি তোমাকে ছাড়তে বাধ্য হই।আবির কখনো তোমার মতো করেনি।ও একদম আমার মনের মতো।ও আমাকে যথেষ্ট স্পেস দিয়েছে।ওকে ভালোবাসাটাই স্বাভাবিক না?কিন্তু আমি তোমাকেও অনেক বেশি ভালোবাসতাম।কিন্তু এখন আমি শুধু আবির কে ভালবাসি।
-চুপ করো একদম চুপ।তুমি শুধু আমার।তুমি ঐ আবির কে ভালোবাসতে পারোনা।
-আমি আবির কে ভালবাসি
-আমি কখনো ভাবিনি আমাকে এই জায়গায় আসতে হবে।তুমি শুধু আমার।তুমি আমার না হলে তুমি অন্য কারো হতে পারবেনা।আমি তোমাকেও শেষ করে দিবো।তুমি যদি আমার না হও তোমাকে আমি কারো হতে দিবোনা।
পাশের রুম থেকে গুলির শব্দ আসে।তনুজা চিৎকার করে উঠে ভয়ে।তুর্য হাসতে থাকে।
-আমি তোমার কথা রেখেছি।আমি তোমার মতো নই।আমি তোমার কথা শুনেছি।আমি আবির কে খুন করিনি।ওরা আবিরকে শেষ করে দিয়েছে।আমি কিন্তু কিছু করিনি।
-তুর্য আই হেট ইউ ! আই হেট ইউ! তুমি আমার আবিরকে শেষ করে দিলে কিন্তূ কোনো লাভ নেই।আমি আবিরকেই ভালোবাসি।আমি শুধু আবির কে ভালবাসি।
-একদম চুপ।তুমি শুধু আমার।তুমি আমার না হলে তোমাকে আমি কারও হতে দিবোনা।আবির তো শেষ।এবার তোমাকে যেতে হবে।আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।কিন্তু কিছু করার নেই।তোমাকে মারতেই হবে।আমি কখনো ভাবিনি যে এই পরিস্থিতি তৈরি হবে কিন্তু তোমার জন্য সব এলোমেলো হয়ে গেলো।বাই তনু বাই।তুমি শুধু আমার।তনু শুধু তুর্যর।আই লাভ ইউ তনু!

তনুজা কিছু বলতে চাইলো।কিন্তু কিছু বলার আগেই তুর্য তনুজার মাথায় গুলি করে।তনুজা তুর্যর কোলে পরে যায়।তুর্য বিজয়ীর হাসি হাসছে কিন্তু তার চোখে পানি।সে তনুজাকে বুকে জড়িয়ে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে থাকে আর বলতে থাকে "তনু তুমি বলেছিলে অতিরিক্ত কোনোকিছুই ভালোনা।আমি তোমাকে অতিরিক্ত ভালোবেসে ছিলাম।তোমার কথামত এই অতিরিক্ত ভালোবাসাটাই সব শেষ করে দিলো।কিন্তু আমি তোমাকে সত্যি অনেক ভালোবাসি।তোমার সাথে আমি অন্য কাউকেই সহ্য করতে পারিনা।তুমি শুধু আমার।আই লাভ ইউ তনু"।তুর্য নিজেকেও গুলি করে।শেষ মুহূর্তে সে রক্ত দিয়ে লিখে রেখে যায় "তনু শুধু তুর্যর"।তনুজাকে বুকে জড়িয়ে তুর্য শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।অতিরিক্ত ভালোবাসার পরিণাম আজকের এই দিন!

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ফেব্রুয়ারির গান

নিষ্ঠুর বর্বরতা

নোনাজলের দীর্ঘ শ্বাস