নিহন্তা




।। শুভ্র ।।



ঘড়িতে তখন ২ টো বেজে ৪০ মিনিট।

অঙ্কন বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। ঝুপ করে একদল অন্ধকার গিলে নেয় ওকে। মেঝেতেই বসে পরে। শীতের রাত। তবু কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে। টেনে টেনে শ্বাস নেয়। ভয় করছে অঙ্কনের। উঠে দাঁড়ায়। কোন মতে ঘরে ঢুকে দরজাটা আটকে দেয়।

পাথরের মতো জমে যায়। শিরদাঁড়া দিয়ে শীতল স্রোত নেমে আসে। প্রচণ্ড পিপাসা পায় । একটা ঘোরের মধ্যেই সামনে এগিয়ে যায়। বিছানার কাছটায় পৌঁছে, দাঁড়িয়ে পড়ে।

নিকিতা ঘুমিয়ে আছে। ওর স্ত্রী। ৬ বছরের সংসার। ভালোবেসেই নিকিতাকে বিয়ে করে। বিয়ের প্রথম কয়টা বছর ভালোবাসাটা ওদের মধ্যে ছিল। আর দ্বিতীয় বছরেই স্নিগ্ধা আসে ওদের মাঝে। বেশ সুখের মধ্যেই ছিল ওরা। সাজানো গোছানো সংসার।

সমস্যাটা বাঁধে গত বছর জুলাইয়ের দিকে। অঙ্কনের চাকরিটা হঠাৎ করে চলে যায়। বাড়িতে কিছু বলতে পারে না। মা মেয়ের মুখের দিকে তাকালে এই কঠিন সত্যটা আর বলা হয়ে ওঠে না। নিজের মধ্যেই ঘুরতে থাকে। গুটিয়ে যায়। পালটে যায়। অল্পেতে বিরক্তি এসে যেত। স্নিগ্ধাকে মারধোর করতো। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। শেষের দিকে রাতগুলো জেগেই কাটাতো।

একরাত্রে বারান্দায় দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরায়। টানততে থাকে। হঠাৎ করে সিগারেটটা তিনতলা থেকে নিচে ফেলে দেয়। ওটা ঘুরতে ঘুরতে অন্ধকারে হারিয়ে যায়। ঘরে ঢোকে অঙ্কন। বিছানার দিকে এগিয়ে যায়।

অঙ্কনের দিকে পিঠ করে শুয়ে আছে নিকিতা। নিশ্বাসের সাথে সাথে ওর বুক্টা উঠানামা করছে। পাশে স্নিগ্ধা। কুণ্ডলী পাকিয়ে আছে।

অঙ্কন ঘামতে থাকে প্রচণ্ড শীতের মধ্যেই। সবকিছু গুলিয়ে যায়। ভয় পেয়ে বসে ওকে। পিছনে সরে আসে। কিছু একটার সাথে পিঠে ধাক্কা লাগে। ঘুরে তাকায়। ছিটকে সরে যায় এক কোণায়। একটা শরীর। নিকিতা। চোখগুলো বিভৎস রকম বড় হয়ে আছে। অঙ্কন চিৎকার করে ওঠে। পিছলে যায় মেঝেতে রক্ত। কিছুটা দূরে পড়ে আছে স্নিগ্ধার নিথর শরীরটা।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ফেব্রুয়ারির গান

নিষ্ঠুর বর্বরতা

নোনাজলের দীর্ঘ শ্বাস